Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ঢেঁড়সের রোগ ও তার প্রতিকার

ঢেঁড়স বাংলাদেশের অন্যতম গ্রীষ্মকালীন সবজি। সবজি হিসেবে এটি সবার নিকটই প্রিয়। এতে অধিক মাত্রায় ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং খনিজ পদার্থ আছে। ঢেঁড়সের বীজে উচ্চমানের তেল ও আমিষ আছে। আমাশয়, কোষ্টকাঠিন্যসহ পেটের পীড়ায় ঢেঁড়স অত্যন্ত উপকারী। আবার ঢেঁড়স গাছের আঁশ দিয়ে রশি তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই জনপ্রিয় সবজিটি বেশ কিছু ক্ষতিকারক রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। ওই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ঢেঁড়সের ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।  
 

১. রোগের নাম : ঢলে পড়া (Fusarial wilt) রোগ
রোগের কারণ : ফিজারিয়াম অক্সিসপোরাম এফএসপি ভ্যাজিনফেক্টাম (Fusarium oxysporum f.sp. vesinfectum) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : ছত্রাকগুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে। মাটিতে জৈব সার বেশি থাকলে এবং জমিতে ধানের খড়কুটা থাকলে জীবাণুর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে (২৮-৩০ ডিগ্রি সে.) ও যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ : এ রোগ ঢেঁড়স গাছের বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। তবে চারা গাছগুলোতেই বেশি দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে পাতা গুটিয়ে যায় এবং সর্বশেষে গাছটি মরে যায়।
আক্রান্ত গাছের কা- বা শিকড় লম্বালম্বিভাবে চিরলে এর পরিবহন কলাগুলোতে কালো দাগ দেখা যায়।         
প্রতিকার : শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। বর্ষার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে ঢেঁড়শের বীজ বপন করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন-বারি ঢেঁড়স ১ চাষ করতে হবে।


ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে। জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
জমিতে উপযুক্ত পরিমাণে পটাশ সার প্রয়োগ করলে রোগ অনেক কম হয়। শিকড় গিট কৃমি দমন করতে হবে কারণ এটি ছত্রাকের অনুপ্রবেশে সাহায্য করে।  কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক  (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক  (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।        

 

২.  রোগের নাম : গোড়া ও কাণ্ড পচা (Foot and stem rot) রোগ
রোগের কারণ : ম্যাক্রোফোমিনা ফেসিওলিনা  (Macrophomina phaseolina) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : রোগটি বীজ, মাটি ও বায়ু বাহিত। উষ্ম ও আর্দ্র আবহাওয়া, অতিরিক্ত নাইট্রোজন ও কম পটাশ সার ব্যবহার করলে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। মাটির উষ্ণতা (৪০ ডিগ্রি সে.) বেশি হলেও রোগ বেশি হয়।
রোগের লক্ষণ : সাধারণত মে মাসের দিকে এই রোগ দেখা যায় এবং জুন-জুলাই মাসে মারাত্মক আকার ধারণ করে।
মাটি সংলগ্ন গাছের গোড়া নরম হয়ে পচে যায়। আক্রান্ত শিকড়ে ও কা-ে কালো বিন্দুর ন্যায় পিকনিডিয়া দেখা যায়। রোগ বিকাশের অনুকূল অবস্থায় ২-৩ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ গাছ শুকিয়ে যায়।        
প্রতিকার  : সুস্থ বীজ বপন করতে হবে। শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। মৌসুমের শুরুতেই ক্ষেতের গাছ শিকড়সহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। বর্ষার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে ঢেঁড়সের বীজ বপন করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন-বারি ঢেঁড়স ১ চাষ করতে হবে।
কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন+থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক  (যেমন-ডাইথেন এম ৪৫) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-সানভিট ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।        

 

৩. রোগের নাম : শিরা স্বচ্ছতা বা হলুদ শিরা মোজাইক (Vein clearing or yellow vein mosaic) রোগ
রোগের কারণ : ভাইরাস (ঠরৎঁং) দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : ভাইরাস আক্রান্ত ঢেঁড়স গাছের সংগৃহীত বীজ বপনের ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগাক্রান্ত বিকল্প পোষক হতে সাদা মাছি দ্বারা এ রোগ ছড়ায়। পরাগায়নের মাধ্যমে ও কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ : গাছের যে কোনো বয়সেই এ রোগ হতে পারে। ভাইরাস আক্রান্ত পাতার শিরাগুলো স্বচ্ছ হয়ে যায়। রোগ মারাত্মক হলে সম্পূর্ণ পাতাই হলুদ বর্ণ ধারণ করে, পাতা ছোট হয় ও গাছ খর্বাকৃতি হয়। রোগাক্রমণের ফলে গাছে ফুল কম হয়, ফল আকারে ছোট, শক্ত ও হলুদাভ সবুজ রঙের হয়।        
প্রতিকার : রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন-বারি ঢেঁড়স ১ চাষ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।
পরবর্তী বছর বপনের জন্য আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা যাবে না।
সাদা মাছি দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক  (যেমন-অ্যাডমায়ার বা ইমিটাফ) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

৪.  রোগের নাম : পাতায় দাগ (Leaf spot) রোগ
রোগের কারণ : অলটারনারিয়া ও সারকোসপোরা (Alternaria and Cercospora) প্রজাতির ছত্রাকদ্বয়ের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : গাছের পরিত্যক্ত অংশ হতে রোগের জীবাণু বায়ু, পানি প্রভৃতির মাধ্যমে এক জমি হতে অন্য জমি অথবা এক গাছ হতে অন্য গাছে ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ : যে কোনো বয়সের গাছ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।


অলটারনারিয়া নামক ছত্রাক পাতায় বিভিন্ন আয়তনের গোলাকার, বাদামি ও চক্রাকার দাগ উৎপন্ন করে। সাধারণত দুর্বল গাছে এই রোগ বেশি হয়। সারকোসপোরা নামক ছত্রাক পাতার ওপরে কোনো দাগ সৃষ্টি করে না কিন্তু পাতার নিচের দিকে ঘন কালো গুঁড়ার আস্তরণের সৃষ্টি করে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা মুচড়িয়ে যায় এবং পরে ঝলসে ঝড়ে পড়ে।                
প্রতিকার : ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।


রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে, যেমন-বারি ঢেঁড়স-১। পরিমিত সার ও সময়মতো সেচ প্রয়োগ করতে হবে। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন+থিরাম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। অলটারনারিয়া পাতায় দাগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে ইপ্রোডিয়ন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-রোভরাল ৫০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা ডাইফেনোকোনাজল+এ্যাজোক্সিস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-এমিস্টার টপ ৩২৫ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে। সারকোসপোরা পাতায় দাগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার গাছে স্প্রের করতে হবে।
 

৫.  রোগের নাম : শিকড় গিট (Root knot) রোগ
রোগের কারণ : মেলোয়ডোগাইন (Meloidogyne spp.) প্রজাতির কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার : মেলোয়ডোজাইন প্রজাতির কৃমি মাটিতে বসবাস করে। আক্রান্ত মাটি, শিকড়ের অংশ, বৃষ্টি ও সেচের পানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতির দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাধারণত ২৭-৩০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা, হালকা মাটি ও একই জমিতে বছরের পর বছর ঢেঁড়স চাষ করলে এ রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
রোগের লক্ষণ  : চারা অবস্থায় কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং গাছ খর্বাকৃতির হয়।
পাতা হলুদাভ সবুজ বা হলুদ রঙ ধারণ করে ও পাতা ঝড়ে পড়ে। গাছে ফুল ও ফলের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
আক্রান্ত গাছের মূলে ও মূলরোমে অসংখ্য গিট দেখা যায়।
এ গিটগুলো দেখতে সাদাটে রঙের হয়।    
প্রতিকার : ফসল সংগ্রহের পর অবশিষ্টাংশ পুড়ে ফেলতে হবে।


শুষ্ক মৌসুমে জমি পতিত রেখে ২/৩ বার চাষ দিয়ে মাটি ভালোভাবে শুকাতে হবে। এতে কৃমি মরে যায়। গম, ভুট্টা, বাদাম, সরিষা ইত্যাদি দ্বারা শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে। জমি প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের কৃমি মারা যায়, তাই সুযোগ থাকলে বছরে একবার প্লাবিত করে রাখতে হবে।
হেক্টর প্রতি ৫ টন অর্ধ পচা মুরগির বিষ্ঠা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগের ২-৩ সপ্তাহ পর জমিতে বীজ বপন করতে হবে।

 

রোগের লক্ষণ দেখা গেলে হেক্টরপ্রতি ৪০ কেজি কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক (যেমন-ফুরাডান ৫জি) অথবা ইসাজোফস গ্রুপের কীটনাশক (যেমন-মিরাল ৩জি) মাটিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

 

বিজ্ঞানী ড. কে এম খালেকুজ্জামান
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই শিবগঞ্জ, বগুড়া। মোবাইল : ০১৯১১-৭৬২৯৭৮, ই-মেইল : zaman.path@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon